‘পরিবার আমার ইসলাম গ্রহণ মেনে নেয়নি’

 

ইতালির নাগরিক দাউদ ক্যাথলিক খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালে দাউদ ইসলাম গ্রহণ করেন। স্কুলজীবনের এক মুসলিম বন্ধুর সূত্রে তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন। ইসলামের প্রতি কৌতূহল নিয়ে দাউদ কোরআন, হাদিস ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী পাঠ করেন এবং ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম নিউজে তাঁর প্রকাশিত সাক্ষাত্কারের ভাষান্তর করেছেন ড. ইকবাল কবীর মোহন

প্রশ্ন : প্রথম কখন ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারলেন?

উত্তর : আমি তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এক মুসলিম বন্ধুর কাছে প্রথম ইসলামের কথা শুনি। সে ইসলাম ও রাসুল (সা.)-এর হাদিস সম্পর্কে আমাকে অনেক কিছু বলত। সে বড়দিনের উৎসব পালন করত না। বলত, ইসলাম তাকে এই অনুমতি দেয়নি। বিষয়টি আমার মনে কৌতূহল জাগায়। সে আমাকে মসজিদে নিয়ে যেত। আমি তার মুসলিম বন্ধু এবং তাদের ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম। এভাবেই আমি ইসলাম ও মুসলমানের জীবনপ্রণালী সম্পর্কে ধীরে ধীরে জানতে পারলাম।

প্রশ্ন : মুসলিম হওয়ার আগে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে আপনার ধারণা কেমন ছিল?

উত্তর : ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা বোঝার আগে মিডিয়ার অপপ্রচার বিশ্বাস করতাম। মুসলমান বলতে বুঝতাম পুরুষদের মুখে দাড়ি রাখা আর মাথায় টুপি পরা এবং মহিলারা পা থেকে মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণ আবৃত থাকা। মুসলিমরা সন্ত্রাসী—এ কথাও আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা কিংবা যুক্তরাজ্যের অধিবাসীরা মুসলিম হতে পারে, তা আমার ধারণার বাইরে ছিল।

প্রশ্ন : মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

উত্তর : আমি বুঝতে পারি, ইসলামের বাণী বাস্তবসম্মত। এমন একটি ধর্মই মানুষের প্রয়োজন। ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে আমি যত জানছিলাম, ততই প্রশান্তি লাভ করছিলাম। আমার মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পেলাম। পবিত্র কোরআন প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অবতীর্ণ। অথচ আজ পর্যন্ত এর কিছুই পরিবর্তন হয়নি। এমনকি একটি জের-জবর পর্যন্ত ছুটে যায়নি। কোরআনে অতীত ইতিহাস, বর্তমান সময়, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ভবিষ্যতের অনেক কিছুর বর্ণনা রয়েছে। এটি বিস্ময়কর। এমন বিজ্ঞানময় ও বাস্তবসম্মত কিতাব মানুষের চিন্তারও বাইরে। ইসলাম একটি জীবনবিধানও। ইসলামের এসব চমত্কার বৈশিষ্ট্য আমাকে অভিভূত করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিস পড়েই আমি ইসলামের পথে অগ্রসর হই, ইসলাম গ্রহণ করি।

আরো পড়তে পারেন:  সিনেমার চেয়েও ভয়ঙ্কর ঘটনা! (ভিডিও)

প্রশ্ন : মুসলিম হওয়ার পর কী কী সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে?

উত্তর : বড় সমস্যা ছিল আমার মা-বাবা। তাঁরা খুবই ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক। তাঁরা যে ধর্মে গভীর আস্থাশীল আমি তা ত্যাগ করেছি—এটা তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। পত্র-পত্রিকার প্রচারণার কারণে তাঁরা বিশ্বাস করতেন ইসলাম একটি অতি উগ্র ধর্ম। আমি আমার মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলেছি, ভালো করে না জেনে কোনো কিছুই বিচার করা যায় না। কিন্তু তাঁরা এমন দৃঢ়-স্থির যে, তাঁরা আমার কোনো কথাই শুনতে চাইলেন না। আমার স্পষ্ট ধারণা ছিল, মা-বাবা আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি মোটেও মেনে নেবেন না। প্রায় চার মাস পর মা-বাবা আমার মুখে ইসলামের কথা শুনলেন। তারপর তাঁরা আমাকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বললেন, ‘হয় ইসলাম ত্যাগ করে বাড়ি থাকো নতুবা বাসা থেকে বের হয়ে যাও।’ আমি আমার বিশ্বাস ত্যাগ না করে বাড়ি ত্যাগ করলাম। এখন আমার এক বন্ধুর সঙ্গে বসবাস করছি। সে আমার ভালো বন্ধু। মুসলিমরা আমাকে তাদের আপনজন করে নিয়েছে।

প্রশ্ন : অমুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে কিভাবে সামাজিক সম্পর্ক রাখেন?

উত্তর : আমি যখন খ্রিস্টান ছিলাম তখনো আমি নৈশ ক্লাব বা পার্টিতে যেতাম না। আমার মনের গভীরে এ অনুভূতি ছিল যে মাদক ও মদ গ্রহণ করা খারাপ কাজ। আমি এমন বন্ধুদের সঙ্গে চলাফেরা করতাম না, তাদের কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত হতাম না। আমার মনে হতো, আমি যেন কিছু একটা হারাচ্ছি। আজও আমার অমুসলিম বন্ধু আছে। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ইসলাম অনুমোদিত সীমার মধ্যেই রয়েছে।

 

সূত্র: কালের কন্ঠ

এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফেইসবুক পেজটি লাইক দিন এবং এই রকম আরো খবরের এলার্ট পেতে থাকুন

 আরো পড়তে পারেন:  

Loading...
আরো পড়তে পারেন:  শাপলা চত্বরে সমাবেশের ১১ বছর পর হেফাজতে ইসলামের কী অবস্থা এখন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *