রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার হকদার মা। সেই মাকে হাড়-কাঁপানো শীতের মধ্যে রেলস্টেশনে রেখে পালিয়ে গেছে তাঁর স্বজনরা। উপরন্তু তিনি ছিলেন একজন শতবর্ষী বৃদ্ধা। প্ল্যাটফর্মে ১৪ দিন থাকার পর গত রবিবার রাতে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে কিছুটা সুস্থ হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের এই ঘটনাটি পুরো জাতিকে নিস্তব্ধ করে দিয়েছে।
কিছুদিন পর পর এ ধরনের ঘটনা আমাদের জানান দিচ্ছে যে আমরা আসলে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছি। ইসলামের সোনালি পথ ছেড়ে আমরা জাহান্নামের পথকে বেছে নিয়েছি। আমাদের চিন্তা-চেতনায় শয়তান বাসা বেঁধেছে। তাই আল্লাহর দেওয়া হুকুম ও আশ্বাসও আমরা ভুলে গেছি।
নিউজটির নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘দরিদ্রতা হয়তো অনেক সময় আপনজনকেও দূরে সরিয়ে দেয়।’ ঘটনা হয়তো অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু যদি দরিদ্রতার কারণেও হয়ে থাকে। তবু এটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ যে ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ করবে, মহান আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তোমাদের দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং তোমাদের কার্পণ্যের আদেশ করে। অথচ আল্লাহ তোমাদের তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৮)
তা ছাড়া অন্য কোনো কারণেও পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ করার সুযোগ নেই। শুধু পিতা-মাতা কেন, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সব আত্মীয় ও প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কোরো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, ইয়াতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের, যারা দাম্ভিক, অহংকারী।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদতের হুকুমের পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের আদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের আরো অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের হুকুম করেছেন। এসব আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তাদেরকে আমাদের পৃথিবীতে পাঠানোর বাহ্যিক মাধ্যম বানিয়েছেন, তাই তাঁদের রাস্তায় ফেলে আসা তো দূরের কথা, তাঁদের সঙ্গে কটু কথা বলারও সুযোগ নেই।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার রব ফায়সালা করে (আদেশ) দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারোর ইবাদত না করতে ও মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন বা উভয়েই তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ্’ বলো না। এবং তাদের ধমকও দিয়ো না। বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)।
এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সন্তানের ওপর মা-বাবার কী অধিকার আছে? তিনি বলেন, তারা তোমার জান্নাত এবং তোমার জাহান্নাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৬২)
অর্থাৎ তাঁদের সঙ্গে আমাদের আচরণই ঠিক করবে যে আমাদের ঠিকানা কি জান্নাত হবে নাকি জাহান্নাম।
যে মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকালে মহান আল্লাহ কবুল হজের সওয়াব দান করেন, সেই মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা রাস্তায় ফেলে যাওয়া কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না।
দুনিয়াতে আমরা যা কিছু উপার্জন করি, তার মধ্যেও মা-বাবার হক রয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘লোকেরা জিজ্ঞেস করছে, আমরা কি ব্যয় করব? জবাব দাও, যে অর্থই তোমরা ব্যয় করো না কেন, তা নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো। আর যে সৎকাজই তোমরা করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবগত হবেন। (সুরা: বাকারা, আয়াত : ২১৫)
উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ ব্যয়ের প্রথম হকদার পিতা-মাতাকে বানিয়েছেন। তারপর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের রাখা হয়েছে।
তাই কারো কথায় প্রভাবিত হয়ে কিংবা অভাব-অনটনের ভয়ে কখনো মা-বাবার সঙ্গে অসদাচরণ করা যাবে না। মিছে দুনিয়ার মোহে পড়ে নিজের জান্নাতকে রাস্তায় ফেলে আসা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ