গরুর মাংস খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়—অনেক মানুষই এমনটা মনে করেন। কারণ এটি কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরুর মাংসে উপকারিতা অনেক। তবে মাত্রাতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণও হতে পারে।
পরিমিত পরিমাণে সঠিকভাবে খেলে গরুর মাংস থেকে যে পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায় তা সমপরিমাণ অন্য কিছু থেকে পাওয়া কঠিন। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে গরুর মাংস কতটুকু ও কীভাবে খাওয়া উচিত তা জানতে হবে—
গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৬৭ শতাংশ পানি ও ১৮০ কিলো-ক্যালরি থাকে। এতে ২১ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম চর্বি, ৬ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ২.৩ গ্রাম লৌহ, ০.০৮ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.২৬ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-২, ৮.২ মি.গ্রা. নায়াসিন থাকে। এছাড়াও এতে কোলেস্ট্রলের মাত্রা বেশি।
গরুর মাংসে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলো যেসব কারণে জরুরি—
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
- ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
- পেশি, দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে।
- ত্বক/চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- খাবার থেকে দেহে শক্তি যোগান দেয়।
- স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত আলসেমি/ ক্লান্তি বা শরীরের অসাড়তা দূর করে কর্মোদ্যম রাখে।
- ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
- অবসাদ/ মানসিক বিভ্রান্তি/ হতাশা দূর করে।
কতটুকু খাবেন?
একজন সুস্থ ব্যক্তির দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩০০ মিলিগ্রাম এবং হার্টের রোগীদের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম। তাই দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। ৩ আউন্স মাংসে আছে ২০০ কিলো ক্যালোরি, যা দৈনিক মাত্র ১০ ক্যালোরির জোগান দেবে। এই ৩ আউন্স মাংসে কোলেস্টেরল থাকে ৫৩ মিলিগ্রাম।
গরুর মাংসে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
পুষ্টিবিদ চৌধুরী তাসনিম হাসিন জানিয়েছেন, প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা নির্ভর করে আপনার ওজনের ওপর। ধরলাম একজন মানুষের আদর্শ ওজন ৫০ কেজি। তিনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে প্রতিদিন তার ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন, তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক।
আবার মেয়েদের মাসিক চলাকালীন কিংবা গর্ভবতী অবস্থায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আদর্শ ওজন ৫০ কেজি হলে তারা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে পারবেন। যাদের ওজন আদর্শ ওজনের চাইতে কম তাদেরও বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন।
খাওয়ার প্রক্রিয়া
গরুর মাংস কতটুকু ক্ষতিকর, সেটা নির্ভর করবে আপনি কী পরিমাণে খাচ্ছেন তার উপর। আবার সবজি দিয়ে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। তবে সপ্তাহে দুই থেকে একবার খাওয়াই ভালো।
গরুর মাংস খাওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিয়ম মেনে রান্না করতে হবে। রান্নায় তেলের ব্যবহার কমিয়ে রান্না করুন। ভুনা করে বেশি মসলাযুক্ত রান্না করবেন না। গরুর মাংসের চর্বির পরিমাণ কমাতে বাড়তি চর্বি ফেলে দিয়ে রান্না করা যেতে পারে। কারণ চর্বির পরিমাণ বেশি হলে ক্ষতি শরীরের জন্যই।
নিয়ম না মানলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
তবে মাংসে আঁশের পরিমাণ কম থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোলন ক্যানসারে হওয়ার আশংকা থাকে এতে। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ