ছবির উৎস, Getty Images
ভারত সরকার চাইছে জানুয়ারির মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৪০ রুপির নিচে নিয়ে আসতে
ভারত সরকারের ক্রেতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব রোহিত কুমার সিং বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যেই প্রতি কিলো পেঁয়াজের দাম ৪০ রুপির নিচে নিয়ে আসতে পারবে সরকার।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মি. সিং জানিয়েছেন ওই লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে কোনভাবেই পেঁয়াজের প্রতি কিলোর দাম ৬০ রুপির ওপরে উঠতে দেবে না সরকার। যদিও দিল্লিতে পেঁয়াজের দাম ৮০ রুপিতে উঠে গিয়েছিল।
মি. সিংয়ের কথায়, “কেউ বলছেন যে পেঁয়াজের দাম ১০০ রুপিতে পৌঁছে যেতে পারে। তবে আমরা বলছি দাম কিছুতেই কিলোপ্রতি ৬০ রুপির ওপরে উঠতে দেব না। আজ গড় পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ৫৭.০২ রুপি প্রতি কিলো। তবে ৬০ রুপির ওপরে উঠবে না দাম।“
ছবির উৎস, Getty Images
বিদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত
রপ্তানি বন্ধ করে দাম নিয়ন্ত্রণ
ভারতের বাজারে যাতে পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যেই থাকে, তাই কেন্দ্রীয় সরকার গত সপ্তাহের শেষে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভূটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, “রপ্তানি বন্ধ করার একটা কারণ ছিল খরিফ ফসল উঠতে বিলম্ব হওয়া। এছাড়াও তুর্কি আর মিশরের মতো অন্য যেসব বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ আছে, তারাও রপ্তানির ওপরে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে।“
ওই দেশগুলি পেঁয়াজ রপ্তানির ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ করার ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবির উৎস, Getty Images
মঙ্গলবার ভারতে পেঁয়াজের গড় পাইকারি দাম ছিল ৫৭ রুপির সামান্য বেশি
কৃষক বিক্ষোভ
হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ভারতের সব থেকে বড় পেঁয়াজ উৎপাদক রাজ্য মহারাষ্ট্রে কৃষক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
মঙ্গলবারও মহারাষ্ট্রের শিরডিতে কৃষকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শনিবার থেকে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে সোমবার থেকে আবারও চালু হয়েছে পাইকারি বাজার।
নাসিকের পেঁয়াজ বাজারের ব্যাপারী হীরামণ পরদেশী বলছেন যে, গত সপ্তাহের গোড়ায় কুইন্টাল প্রতি (১০০ কেজি) চার হাজার রুপি দাম পাচ্ছিলেন কৃষকরা। রপ্তানি বন্ধের নির্দেশের পরে একদিনেই সেই দাম পড়ে গিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল দাঁড়িয়েছিল।
“দাম হঠাৎই অতটা পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা আমাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন না। কিন্তু সোমবার থেকে আবারও কেনাবেচা শুরু হওয়ায় দাম উঠেছে। এখন দুই থেকে আড়াই হাজার রুপি কুইন্টাল প্রতি দাম পাচ্ছেন কৃষকরা,” জানাচ্ছিলেন মি. পরদেশী।
ছবির উৎস, Getty Images
আবহাওয়ার কারণে অনেক চাষীর ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে
খরিফ ফসলে বিলম্ব
নাসিকে বিবিসির সহযোগী সাংবাদিক প্রভীন ঠাকরে বলছিলেন এবার পেঁয়াজ চাষের ক্ষতি হয়েছে আবহাওয়ার কারণে।
তার কথায়, “খরিফ মরসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম হয়েছে। তখনও ক্ষতি হয়েছে ফসলের। তারপরে হঠাৎই শিলাবৃষ্টি হল। এর ফলে নভেম্বর ডিসেম্বরের মধ্যেই যে ফসল বাজারে চলে আসার কথা ছিল, তাতে অনেক দেরী হল।
“আবার অনেক কৃষকের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বাড়তি খরচ করে ফসল তুলছেনই না, ক্ষেতেই ফেলে রেখে দিয়েছেন,” জানাচ্ছিলেন মি. ঠাকরে।
ছবির উৎস, Getty Images
নতুন করে দুই লক্ষ টন পেঁয়াজ কিনছে সরকার
পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছে সরকার
নাসিকের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হীরামণ পরদেশী বলছেন মঙ্গলবার থেকে সরকারি সমবায় সংস্থা জাতীয় কৃষিপণ্য সমবায় বিপণন ফেডারেশন বা ন্যাফেড আর জাতীয় ক্রেতা সমবায় ফেডারেশন বা এনসিসিএফ বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছে।
ওই দুই সংস্থা কুইন্টাল প্রতি ২২ শো থেকে আড়াই হাজার রুপি দর দিচ্ছে কৃষকদের।
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে এ বছর মোট ৫.১০ লক্ষ টন পেঁয়াজ কেনার লক্ষ্য নিয়েছিল। তার পরে সেই লক্ষ্য আরও বাড়িয়ে সাত লাখ টন করা হয়েছে।
বাড়তি দুই লক্ষ টন যে পেঁয়াজ কেনা হচ্ছে, তার মাধ্যমেই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে সরকার।
মন্ত্রক বলছে যে কোনও এলাকায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে জানতে পারলেই সেখানে পেঁয়াজ বাজার ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
তারা বলছে, “সরকার যে পেঁয়াজ কিনে রেখেছে, তা নিয়মিতই বাজারে ছাড়া হচ্ছে। খোলা বাজারে যেমন যাচ্ছে সেই পেঁয়াজ, আবার ক্রেতাদের কাছে সরাসরিও বিক্রি করা হচ্ছে।“
ছবির উৎস, Getty Images
উত্তর ভারতে পেঁয়াজ রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এক ফসল
পেঁয়াজের রাজনীতি
শিল্প-বাণিজ্য মহল মনে করছে আগামী বছর ভারতে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে তা থেকে সরকার-বিরোধী ক্ষোভ জন্মাতে পারে মানুষের মনে।
তাই একদিকে যেমন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ জারি হয়েছে, তেমনই বাড়তি পেঁয়াজ কিনে ধীরে ধীরে তা দেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শিল্প-বাণিজ্য বিশ্লেষক প্রতিম রঞ্জন বসুর কথায়, “পেঁয়াজ এমনই একটা ফসল, যেটা রাজনৈতিক ভাবে খুবই সংবেদনশীল ফসল, বিশেষ করে উত্তর ভারতে। এর আগে পেঁয়াজের অতিরিক্ত দামের কারণে সরকার পড়ে যেতেও দেখা গেছে।
“তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে ভোটের আগে সরকার চেষ্টা করবে পেঁয়াজের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়,” বলছিলেন মি. বসু।