বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানানো হয়েছে, রোজার আগে ভোট এবং তার ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
আগামী ৩০শে নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ভোটের জন্য ২৪ টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে আগামী রমজানের আগে ভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভোট গ্রহণের তারিখের ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করতে চায় কমিশন।
এছাড়া নির্বাচন আয়োজনে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিশন প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “কেনো থাকবে না, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমাদের কাজ হলো নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বডি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ব্যাপার বলেও জানান মি.আহমেদ। তিনি বলেন, “এটা নির্বাচন কমিশনের চাহিদার বিষয় নয়।”
“ওই আলোচনায় যদি আমাদের অংশ নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে বা আমাদের অংশগ্রহণ কোথায় কতটুকু হতে হবে সেটা আলোচনা সাপেক্ষে। কিন্তু উদ্যোগী মন্ত্রণালয় তো স্বরাষ্ট্র, নির্বাচন কমিশন তো না,” বলেন তিনি।
মানুষ যাতে সুষ্ঠু পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা কমিশন করবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া এআই, অসত্য তথ্য, ভুয়া তথ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিশন কাজ করছে বলেও জানান ইসি সচিব।
ভোটার তালিকা ও সংসদীয় আসনের সীমানা প্রসঙ্গ
ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী ৩১শে অগাস্ট সম্পূরক তালিকাসহ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি।
দোসরা নভেম্বর থেকে ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত যোগ্য ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্তি বা অযোগ্য ব্যক্তির নাম বাতিল এবং যেকোনো ত্রুটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদনের সময় দেওয়া হয়েছে।
এরপর ৩১শে অক্টোবরের সম্পূরক তালিকা শেষে ৩০শে নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে কমিশন।
এছাড়া ১৫ই সেপ্টেম্বর সংসদীয় ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। আর ৩০শে সেপ্টেম্বর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি জিআইএস ম্যাপ প্রকাশ করবে কমিশন।
নির্বাচনে যেসব নতুন রাজনৈতিক দল অংশ নিতে চায়, প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তাদেরকে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে কমিশন। ৩০শে সেপ্টেম্বর দলগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নির্বাচনে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এবং সাংবাদিকদের নীতিমালা প্রণয়নের জন্যও সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে ১৫ই সেপ্টেম্বর।
ছবির উৎস, NurPhoto via Getty Images
ইসি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে দেড় মাস ধরে
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করবে কমিশন। যা এবছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে দেড় মাস।
নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক মালামাল (মনোনয়নপত্র, প্রতীকের পোস্টার, পরিচালনা ম্যানুয়েল) বিতরণের সম্ভাব্য সময় পহেলা ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে কমিশন। এছাড়া ভোটগ্রহণের তারিখের অন্তত ২৫ দিন পূর্বে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে ভোট কেন্দ্রসমূহের চূড়ান্ত তালিকা।
ইসি সচিব বলেন, ব্যালট বক্সের ব্যবহার উপযোগিতা ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন আয়োজনে যতগুলো ব্যালট বক্স প্রয়োজন তা কমিশনের কাছে মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানান, নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন।
ইসি সচিব জানান, নির্বাচনের বাজেটের বিষয়টি এখনো সম্পন্ন করেনি কমিশন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বাজেটের একটা বড় অংশ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় এটি করতে কিছুটা সময় লাগবে।”
ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়েও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানান তিনি। বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় প্রতি কেন্দ্রে গড়ে তিন হাজার এবং প্রতি বুথে গড়ে পাঁচশ পুরুষ এবং চারশ মহিলা ভোটার ভোট দিতে পারবেন। তবে পুনর্মূল্যায়ন করে প্রতি বুথে নারী পুরুষ ভোটারের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হবে। এই তালিকাটি ভোট গ্রহণের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ দিন আগে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।