গত বছরের ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে আগের মামলার সঙ্গে তাদের নামের পাশে নতুন নতুন মামলা যুক্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিএনপি’’র তৃণমূল কর্মীদের অনেকে।
দাবি করছেন, এসব মামলায় জামিন পেতে নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত অব্দি ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেন্দ্রীয় নেতা বা দলীয় আইনজীবীরা কতটা খোঁজ রাখেন তাদের?
বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘২৮শে অক্টোবরের পর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে অন্ততঃ ৭৩৮ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
একই সময়ে, ২৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন মি. কায়সার কামাল।
যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি’র দাবি করা আটকের সংখ্যা সঠিক নয় বলে, আগেই মন্তব্য করেছেন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি।
ওই সমাবেশের পর সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনায় পর দিনই ২৮টি মামলা হয়।
গ্রেপ্তার হন বিএনপির মহাসচিব-সহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
এর আগে-পরে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেককেই কারাগারে যেতে হয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবর দাবী করা হয়েছে, হামলা, নাশকতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো সুনির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই মামলা বা গ্রেপ্তার করা হয়। কাউকে হয়রানি করার জন্য মামলা হয়নি।
তৃণমূলের অভিজ্ঞতা
উল্লেখিত সময়ে ভোলা জেলার সদর উপজেলায় বিএনপি’র নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়।
চার মামলার এজাহারে ১০৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিলো।
তবে, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, এর বাইরেও নিরীহ সমর্থক বা সাধারণ মানুষকে মামলায় হয়রানি করা হয়।
জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাইসুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১০৪ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে যাদেরই আটক করা হয়েছে তাদেরকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
‘শ’ খানেক নেতাকর্মী কারাগারে ছিলেন, যারা ইতোমধ্যে জামিনে বেরিয়েছেন’, উল্লেখ করেন মি. রাইসুল। এখনো ৮ জন কারাবন্দী আছেন বলে দাবি তার।
তিনি নিজে দু’টি মামলার এক নম্বর আসামি।
রাইসুল আলম এজাহারে নাম থাকা প্রায় সবাইকে নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন উচ্চ আদালত থেকে মামলাগুলোতে আগাম জামিন নিতে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, নিজেরাই নিজেদের খরচ সম্মিলিতভাবে মেটাচ্ছেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দিচ্ছেন, যাদের সামর্থ্য নেই তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে না।
‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীরাই তাদের মামলাগুলো পরিচালনা করে থাকেন।’ বলছিলেন ভোলা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব নুর মোহাম্মদ রুবেল।
আগাম জামিন নিতে আসা নেতাকর্মীদের তালিকায় আছেন তিনিও।
মামলার খরচ হিসেবে যতটুকু না নিলেই নয়, ততটুকুই শুধু তারা নিচ্ছেন বলে জানান মি. নুর মোহাম্মদ।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর আটক হয়েছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোঃ শরিফুল ইসলাম শরীফ। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর সোমবার মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
মি. শরীফ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘৯০ দিন জেলে থাকতে হয়েছে। একাধিকবার নিম্ন আদালতে চেষ্টা করেছি জামিন নেয়ার জন্য। পরে উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েছি।’
বলেন, নিজের মামলার খরচ নিজেই বহন করেছেন তিনি।
বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আদালতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা থাকলে তাদের ফি হয়তো দিতে হয় না। তবে মামলা চালানোর অন্যান খবর কর্মীদেরই দিতে হয়। কখনো কখনো স্থানীয় বড় নেতাদের কাছ থেকে কিছু সহায়তা পাওয়া যায়।
রাজবাড়ীর একজন বিএনপি নেতা বলছেন, তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। কেন্দ্র থেকে তিনি কোন সহায়তা পাননি। তবে স্থানীয় একজন নেতা কিছুটা সাহায্য করছেন।
আইনি লড়াইয়ে দল কী করছে
দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘আইনগত সহায়তা নতুন নয়। ২০১৩ সাল থেকেই দেশব্যাপী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতাকর্মীদের সহায়তা দিয়ে আসছে’।
‘সেই পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি আছে। অতএব, ওয়ার্ডের নেতা যখন অ্যারেস্ট হয়, স্বাভাবিকভাবেই তার উপজেলা জানে। উপজেলা জেলাকে বা কেন্দ্রে জানায়। দ্যাট মিনস্ উই হ্যাভ আ ডেটা।’
স্থানীয় পর্যায়ে গ্রেফতার হলে স্থানীয় আইনজীবী ফোরাম তার দায়িত্ব নেন বলে মন্তব্য করেন মি. কামাল।
বিএনপি করতে গিয়ে আইনি জটিলতায় পড়লে আইনগত সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয় যখন দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের বাইরে কোন বিএনপি সমর্থক আমজনতাও গ্রেফতার হয়ে যায়।’
পরিচয় নিশ্চিত হলে তাদেরও আইনি সহায়তা দেয়া হয়, যোগ করেন কায়সার কামাল।
এছাড়া রাজনৈতিকভাবেও নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে চাপ তৈরি করতে চায় বিএনপি। এজন্য বিভিন্ন সভাসমাবেশে ও আলোচনায় নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়টি অন্যতম দাবি হিসাবে আনছে দলটি।
মামলা ও আটকের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে নেতা-কর্মীদের নামে প্রায় দেড় লাখ মামলা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিএনপি।
বলা হচ্ছে, এসব মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর পঞ্চাশ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
যদিও মামলার এই সংখ্যা বিবিসি’র পক্ষে আলাদা করে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন সময়ে মামলার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি’র ২১ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে থাকার দাবি ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দেন।
সেদিন তিনি বলেন, ১১ হাজার নেতাকর্মী তখন পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন, যাদের মধ্যে দুই হাজার সেদিনই জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা।