ডিসেম্বর ১৯৬৬ টেক্সাসের ফোর্টওয়ার্থে একটি প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান পরিবারে আমার জন্ম। সাত বছর বয়সে আমার মাকে হারাই। একজন খ্রিস্টান হিসেবেই আমরা বেড়ে উঠি। চার্চই ছিল নৈতিক শিক্ষার প্রধান উৎস। তবে এই শিক্ষা আমার ব্যক্তি ও সামাজিক জীবন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কলেজজীবনে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। প্রথম দিকে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস পড়ার সুযোগ হলো। দিন দিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে আমার উৎসাহ বাড়ছিল। স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ওয়াশিংটন রিপোর্টে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর কাজ করলাম। আমার কোর্স এবং বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে গিয়ে ইসলামী শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হই। ইসলাম সম্পর্কে যতই পড়ছিলাম ততই আমি মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ইসলাম সম্পর্কে জানতে আমি মুসলিম ও অমুসলিম লেখকদের বই পড়তে শুরু করলাম। বেশ কিছু বই ও লেখা আমাকে নাড়া দেয়। এর মধ্যে ইউরোপীয় মুসলিম ও Charles de Gai Eston-এর asterful Islam and Destiny of Mans, ফজলুর রহমানের পর্যালোচনামূলক লেখা Islam and non-muslim, Marshall Hodgson-এর তিন খণ্ডে সমাপ্ত বই The Venture of Islam উল্লেখযোগ্য।
আমি এক বছর সময় নিলাম। এ সময়ে ইসলামী শিক্ষা, বিশ্বাস ও ব্যাবহারিক বিষয়াদি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। দীর্ঘ তিন বছরের পড়াশোনা, গবেষণা এবং গভীর চিন্তাভাবনার পর ওয়াশিংটন ডিসির ইসলামিক সেন্টারে গিয়ে আমি ১৯৮৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। শায়খ ফাতিহ আল মাদির সামনে আমি কলেমা পাঠ করি। মুসলিম-অমুসলিম-নির্বিশেষে সবার একটা প্রশ্নই ছিল, ‘কেন আমি কনভার্ট হলাম।’ উত্তর হলো, প্রথমত, দুনিয়ার মালিক ও বিচারক আল্লাহ প্রত্যেক মানুষের কাজকর্মের বিচার করবেন। প্রত্যেক নারী-পুরুষ তার কর্মের জন্য দায়িত্বশীল হবে। ইসলামের এ বিশ্বাস আমার মনের গভীরে প্রচণ্ড নাড়া দিল। ইসলামের মতে, আমাদের প্রতিটি কর্ম ও ইচ্ছার তাৎপর্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মমতের মধ্যে নৈতিক বিষয়গুলোর সাদৃশ্য আমি লক্ষ করি। কিন্তু অনেক ধর্মীয় প্রশ্ন এবং বিশ্বাসের বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামে যে সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় তা খ্রিস্টান ধর্মে পাওয়া যায়নি।
ইসলাম সম্পর্কে প্রচুর পড়ালেখা ও অনুসন্ধানের পর আমার কাছে একসময় মনে হয়, ইসলামের ওপর আমি বিশ্বাস রাখতে পারি। ছোট থেকে মানুষের সেবা করতে, অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে ভালো লাগে আমার। ইসলাম সম্পর্কে জানার পর অবাক হলাম যে ইসলামেও বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে পরোপকারের বিষয়গুলো অতি স্বচ্ছ ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে চিত্রিত হয়েছে। এ ছাড়া আমি দেখলাম ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তেই ধর্মের কিছু না কিছুর চর্চা আছে। ইসলামের ‘তাওহিদ’ বা একত্ববাদবিষয়ক বিশ্বাস আমাকে প্রভাবিত করল। কোরআন ও সুন্নাহ সহজবোধ্য বলে মনে হয় আমার।
মুসলিম হওয়ার পর ইসলাম আমার জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। কোরআন—যা ইসলামের মূলভিত্তি, তা পড়তে ও শুনতে অপূর্ব লাগে। বেশির ভাগ সময় কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ পড়লেও আলহামদুলিল্লাহ আমি কিছু আরবি শব্দ ও আরবি ভাষা বুঝতে পারছি। আমি কোরআন পড়তে যেমন আনন্দ পাই, তেমনি সুন্নাহ পড়েও আনন্দ পাই। মহানবী (সা.)-এর কথা ও কাজ নিয়ে চিন্তা করলে বোঝা যায় তিনি ছিলেন মানবতার প্রকৃত বন্ধু।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতের ধর্ম হবে ইসলাম। কেননা এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত রিসালাত। তবে শর্ত হলো, মুসলিম উম্মাহকে তার ভেতর ও বাইরের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। মুসলিমদের সঠিকভাবে ইসলাম ধারণ করতে হবে। নিজেদের শিক্ষিত করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই ইসলামের ভবিষ্যৎ কুসুমিত ও বিকশিত হবে।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ