বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত প্রধান সব দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম জুড়ে রয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত সহিংসতা ও হতাহতের খবর।
ইন্টারনেট সংযোগ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর, ‘দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরগুলোয় ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো মোবাইল ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে না পারার কথা জানিয়েছেন গ্রাহকেরা।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
ঢাকার আইসিটি টাওয়ারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বার্থান্বেষি মহলের নানা গুজব বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।
এজন্য আগে কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে সহিংসতা ও সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে একেকটি পত্রিকা হতাহতের একেক ধরণের সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
এরমধ্যে সমকালের প্রধান শিরোনাম, ‘সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ গুলি নিহত ৩১’।এ খবরে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ঢাকায় ২৪ জন, চট্টগ্রামে ও নরসিংদীতে দুজন করে, রংপুর, সাভার ও মাদারীপুরে একজন করে নিহত রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১১ জন ছাত্র।
আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ৩৭ জন প্রাণ হারালেন।
এ সংক্রান্ত সরকারি প্রস্তাব নিয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতার খবর, ‘Govt for 80pc jobs on merit’ অর্থাৎ, ‘সরকারের প্রস্তাব মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ চাকরি’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রোববার আপিল বিভাগের শুনানির সময় সরকার পক্ষ মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব তুলে ধরবে। বাকিটা কোটার ভিত্তিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার রাত ঢাকায় আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
আন্দোলনকারীদের অবস্থান নিয়ে কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর, ‘আন্দোলনকারীরা সংলাপে বসতে রাজি নন’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার ইস্যু সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান করা সংলাপে সাড়া দিচ্ছে না আন্দোলনকারীরা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে কোন আলোচনায় বসবে না বলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
এর বিপরীতে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়ে সরকার উদ্ভূত পরিস্থিত তৈরি করেছে। এ দায় সরকারেরই। সরকার আলোচনার কোন পরিস্থিতি রাখেনি।
এ নিয়ে সরকারের কঠোর বার্তা নিয়ে প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর, ‘আলোচনায় রাজি, এরপরও সহিংসতা হলে কঠোর হবে সরকার’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা আলোচনায় না আসায় এবং দেশজুড়ে সংঘাত ও প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলন দমনে যতোটা প্রয়োজন, ততটাই কঠোর হবে সরকার।
একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে সরকার আরও কঠোরভাবে আন্দোলন দমনের পথে হাঁটবে।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্বৃত্তরা যদি তাদের ধংসাত্মক কার্যকলাপ অব্যাহত রাখে, তাহলে দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে বাধ্য হবে।
তবে গত দুই দিনে অনেক প্রাণহানির ঘটনায় পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা, এ প্রশ্নেও আলোচনা রয়েছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরে।
সে জন্য শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে আদালতে দ্রুত শুনানি করাসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান নিয়ে নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর, ‘সরকারের পদত্যাগেই সমাধান চায় বিএনপি, আজ সর্বদলীয় সমাবেশ’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে রাজপথে ছাত্রজনতার আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব রাজনৈতিক দলের।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের ডাকা সর্বাত্মক শাটডাউনের আগেই এই সমর্থন ঘোষণা করে বিএনপি।
একইসাথে দেশজুড়ে নিরস্ত্র ছাত্রজনতার ওপর পুলিশ ও সরকারি বাহিনীর আক্রমনের প্রতিবাদে দেশের জনগণকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানায়।
শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সর্বদলীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বেলা ৩টায় জাতীয় ঐক্যের এই মিছিল সমাবেশে সর্বস্তরের জনগণকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর, ‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করা: জাতিসংঘ’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
যেকোন হুমকি ও সংঘাত থেকে প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিবের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র এই মন্তব্য করেন।
এদিকে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।
বুধবার জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার এক্স হ্যান্ডেলে দেয়া এক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান।
এ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করেছে।
আন্দোলনের সময় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আন্দোলন শান্তিপূর্ণ রাখার আহ্বান জানান। সেইসাথ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে যেকোন সহিংসতার নিন্দা জানান তিনি।
আন্দোলন চলাকালে অগ্নি সংযোগ নিয়ে বণিক বার্তার প্রথম পাতার খবর, ‘বিটিভি ও সেতু ভবনসহ ১৫ সরকারি- বেসরকারি স্থাপনায় আগুন’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আগুন দেয়া হয়।
মহাখালীতে সেতুভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১৫টি অগ্নিসংযোগের তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তার বরাতে বণিক বার্তা জানায়, বিটিভি ভবনে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস রওনা হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আটকে দেয়।
পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েও নিয়ে যেতে পারেনি।
রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের-বিজিবি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতিকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের হটিয়ে রামপুরা বিটিভি ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ থাকা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতার খবর, ’বাড্ডায় অবরুদ্ধ পুলিশদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চাকরিতে কোটা সংস্কারে দাবিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভবনে আটকা পড়েন পুলিশ সদস্যরা।
পরে বেলা তিনটার কিছু আগে এলিট ফোর্স র্যাব, তাদের হেলিকপ্টার দিয়ে ভবনটির ছাদ থেকে ৬০ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে।
র্যাবের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ছাদে আটকে পড়া ৬০জন পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেছে র্যাব ফোর্সেসের হেলিকপ্টার।
ওই পুলিশ সদস্যরা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ভবনটিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।