ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে উপকূল এলাকায় সর্তক সংকেত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবহাওয়া অফিস জানায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ০৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ০৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কি.মি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭০ কি.মি দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বিবিসিকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাব দুপুরের দিকেই উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করতে পারে। তবে এটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
“গভীর নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট মেঘ দেখেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে সবখানে বৃষ্টি হচ্ছে যা ঘূর্ণিঝড়কে দুর্বল করে দিয়েছে। তবে হালকা বৃষ্টি চলতে থাকবে এবং বাতাসও বাড়বে,” বলেন মি. মনোয়ার।
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকেই টানা বৃষ্টিপাত চলছে। চট্টগ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন জানান, “গতকাল সকাল থেকে এখনো টানা বৃষ্টি চলছে। এক মূহুর্তও থামেনি। আজকে আরেকটু বেড়েছে।”
এছাড়া চট্টগ্রামে জোয়ারের পানিও বেড়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের সাংবাদিক কমল হাসান।
তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের জেটিতে ২২টি জাহাজ ছিল, তাদের গভীর সমুদ্রে যাবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
আবহাওয়া অফিস থেকে গতকালই ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবাণী দেয়া হয়। ঝড় সতর্কীকরন কেন্দ্র থেকে বলা হয়, “গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ১৬ই নভেম্বর বিকাল ৩টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (৮৯ মি.মি. বা তারও বেশি) বর্ষণ হতে পারে।”
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনার কথাও জানায় আবহাওয়া অফিস।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লার উপর দিয়ে ঘন্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের মতো কক্সবাজারেও টানা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি চলছে। সেখানকার আবহাওয়া গুমোট হয়ে রয়েছে বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক এম আর মাহবুব।
তিনি জানান, “সাগর বেশ উত্তাল, সামুদ্রিক সব যান উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে।” তবে সেখানকার জীবনযাত্রা বেশ স্বাভাবিক বলে জানান মি. মাহবুব।
গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় হামুন। তখন ঝড়টি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বাতাসের গতি নিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।
সেসময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের জন্য সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছিল।
এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের টেকনাফ ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত করেছিল। তবে এর তীব্রতা মিয়ানমারেই বেশি ছিল।