ছবির উৎস, Getty Images
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ডিজিটাল টিমে কাজ করেন জেয়নাব আব্বাস।
‘অবমাননাকর’ পোস্টের জেরে বিশ্বকাপের জন্য কাজ করতে আসা এক পাকিস্তানি নারী উপস্থাপিক ভারত ছেড়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ডিজিটাল টিমে কাজ করেন জেয়নাব আব্বাস।
ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সোমবার ভারত ত্যাগ করেছেন জেয়নাব আব্বাস।
যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলছেন, জেয়নাব আব্বাসের ভারত ছাড়ার পেছনে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ রয়েছে।
বিবিসি জেয়নাব আব্বাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, এমনকি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি কোনও বিবৃতি দেননি ভারত ত্যাগ ইস্যুতে।
জেয়নাব আব্বাস ক্রিকেট অনুরাগীদের মধ্যে সুপরিচিত এক মুখ। তিনি ২০১৫ সাল থেকেই নিয়মিত শো উপস্থাপনা এবং ধারাভাষ্য দিয়ে আসছেন।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপে জেয়নাব আব্বাস খ্যাতি লাভ করেন। তিনি পাকিস্তানের প্রথম নারী উপস্থাপিক হিসেবে বিশ্বকাপে কাজ করেছেন।
গত সপ্তাহে তিনি ভারতে পৌঁছান এবং ৬ই অক্টোবর পাকিস্তান বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচে কাজ করেন। এরপর তার ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই ও আহমেদাবাদ যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক আইনজীবী পুরনো কিছু টুইট নিয়ে জেয়নাবের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা বড় ধরনের আক্রমণের শিকার হন এই উপস্থাপক।
আইনজীবী ভিনিত জিন্দালের মামলায় অভিযোগ তোলা হয়, জেয়নাব একটি আনঅফিসিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে ভারত ও হিন্দু ধর্ম নিয়ে ‘অবমাননাকর এবং প্ররোচনামূলক পোস্ট’ দিয়েছেন।
কিছু স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে যা কায়েক বছর আগের কিন্তু এসব পোস্ট এখন সোশাল মিডিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না।
মি. জিন্দালের করা মামলায়, কাশ্মীরের স্বাতন্ত্র্য নিয়েও জেয়নাবের ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টের কথা উল্লেখ রয়েছে।
হিমালয়ান এই অঞ্চল নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত একটা বিষয় এবং এই অঞ্চলের পুরোটাই ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই দাবি করে।
আইনজীবী মি. জিন্দাল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও তার ছেলে ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান জয় শাহকে একটি চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি এই প্রেজেন্টারকে আইসিসি থেকে বরখাস্তের দাবি জানান।
মঙ্গলবার টুইটারে জেয়নাব আব্বাস ভারত অঞ্চলে ট্রেন্ডিং ছিলেন এবং তার পুরনো পোস্টগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে ভারতের অনেক টুইটার ব্যবহারকারী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের টুইটারেও জেয়নাব আব্বাস ট্রেন্ডিং ছিলেন, তবে সেখানে অনেকেই জেয়নাব আব্বাসের পক্ষে কথা বলছেন এবং তার নাম জুড়ে যেসব পোস্ট ভাইরাল হয়েছে সেসবের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পাকিস্তানি সাংবাদিক রিজওয়ান ঘিলজাই বলেছেন, ভারত থেকে ‘নিরাপদ রাস্তায়’ বিদায় নিয়েছেন জেয়নাব। তিনি তার টুইটারে লিখেছেন, “ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্ট নিয়ে জেয়নাবকে হুমকিও দেয়া হয়েছে”।
অক্টোবরের শুরুতে ভারত সফর নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলেন জেয়নাব, নিজের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টে তিনি লিখেছিলেন, “বন্ধুত্ব, একই ভাষা, শিল্পের প্রতি কদর এবং এক বিলিয়ন মানুষের দেশে আইসিসির হয়ে কাজ করতে পেরে আমি খুশি।”
ছয় সপ্তাহের যাত্রা এক সপ্তাহেই শেষ হলো জেয়নাব আব্বাসের।
ছবির উৎস, Getty Images
পাকিস্তান ক্রিকেট দল ভারতের শহর হায়দ্রাবাদে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও সমর্থন পাচ্ছে।
পাকিস্তানিদের ভিসা বিলম্ব
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের তিনদিনও বাকি নেই, কিন্তু এখনও পাকিস্তানের সাংবাদিক ও সমর্থকদের অনেকে ভিসা না পাওয়াতে, সম্প্রতি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান জাকা আশরাফ ‘গুরুত্ব উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।
ইতোমধ্যে হায়দ্রাবাদে পাকিস্তান দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এখনও পর্যন্ত ভিসার অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের সমর্থকরা ও সাংবাদিকরা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে গ্যালারিতে থাকতে পারবেন না।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এনিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে।
পিসিবি তাদের বিবৃতিতে আইসিসি ও বিসিসিআইকে, তাদের বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
আইসিসি যদিও বলছে, পাকিস্তানের অন্তত ৬০ জন সাংবাদিকের ভিসা নিয়ে তারা ভারতের সাথে কাজ করছে। কিন্তু ঠিক কতোজন পাকিস্তান সমর্থক ভারতে ঢুকতে পারবেন তা নিয়ে এখনও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে আইসিসি ও বিসিসিআই পিসিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও আইসিসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এহসান মানিকে কথা দিয়েছিল পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা কোনও সমস্যা হবে না।
এহসান মানি বলেন, “যে কোনও দেশ যদি আইসিসি ইভেন্টের আয়োজক হয় তারা দলের সদস্য থেকে শুরু করে সমর্থকদের ভিসা দেয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার কথা”।
“আমি আইসিসির বোর্ড মিটিংয়ে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বারবার ভিসার কথা তুলেছি, তখন তারা বলেছিল এটা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না”।
পাকিস্তানের ক্রিকেট দলও তাদের ফ্লাইটের একদিন আগে ভিসা পেয়েছেন, যে কারণে দুবাইয়ে একটা পূর্ব পরিকল্পিত বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী ক্যাম্প বাতিল করতে হয়েছে।
হায়দ্রাবাদে পাকিস্তান
পাকিস্তান ক্রিকেট দল ভারতের শহর হায়দ্রাবাদে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও সমর্থন পাচ্ছে।
আজ দলটি এই শহর ছাড়বে, তবে গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের অনেকেই পাকিস্তানের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছে।
মোহাম্মদ রিজওয়ানের শতক উদযাপনের সময় গ্যালারিতে উল্লাস দেখা গেছে।
হায়দ্রাবাদে অনেকে প্রায় সাড়ে আটশো কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ভোপাল থেকে এসেছেন, বাবর আজমের খেলা দেখবেন বলে।
যদিও বাবর প্রথম ম্যাচে ৫ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ রান করে আউট হয়ে গেছেন।
কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট দল তাদের মন ভরিয়েছে।
গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের পরে পাকিস্তানের ক্রিকেট দল হায়দ্রাবাদের মাঠের গ্রাউন্ডসম্যানদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, একজন গ্রাউন্ডসম্যানকে বাবর আজম তার জার্সি উপহার দিয়েছেন।
রিজওয়ান ম্যাচ শেষে বলেন, “কিউরেটর ম্যাচের আগে আমাকে বলছিলেন ২০০ করবে তুমি এখানে। আমি শুধু তার কথা মাথায় রেখেছি।”
রিজওয়ান চোট নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১৩০ রানের ইনিংস খেলেছেন।
সব মিলিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের হায়দ্রাবাস সফর ছিল মনে রাখার মতো বলছেন, মোহাম্মদ রিজওয়ান।