করোনাকালে শিশুর ডায়রিয়া হলে যা করবেন

করোনা প্রতিরোধে স্কুল বন্ধ থাকলেও এ আবহাওয়ায় কোভিড ১৯-এর সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়ার জীবাণুর সক্রিয়তাও শুরু হয়েছে। কোভিড ১৯- এর সংক্রমণ হলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা বা বমির মতো উপসর্গ দেখা যেতে পারে। একদিকে ভ্যাপসা গরম ও অন্যদিকে ঝুমবৃষ্টি-এ রকম আবহাওয়ায় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই পেটের সমস্যা হলে সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে যে সব বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম তাদের সাবধানে রাখা দরকার বললেন ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের (আইএপি) সেক্রেটারি পল্লব চট্টোপাধ্যায়।

 

মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস বন্ধ

বর্ষাকালে জিয়ার্ডিয়াসিস, অ্যামিবায়োসিস, কৃমি ইত্যাদির কারণে পেটের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। জল ও সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারলে এ সমস্যা দূরে রাখা যায়, বলেন শিশু বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ করে এ করোনার অতিমারির সময়ে ছোট বাচ্চাদেরও হাত ধোয়া ও মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস ছাড়ানোর ব্যাপারে বাড়ির মানুষজনকে সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাদের অবশ্যই পানি ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য খারাপ তাদের ডায়রিয়াসহ যেকোনো সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেশি। এছাড়া এদের বারে বারে সংক্রমণ হয় বলে পুষ্টির একটা ঘাটতি থেকে যায়। তাই যেকোনো সংক্রমণই এদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম, তাদেরই সমস্যা বেশি দেখা যায় বলে জানান পল্লব চট্টোপাধ্যায়। বাড়িতে মাছি বা পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে দ্রুত নিষ্পত্তি করা দরকার।

পেটের সমস্যা প্রতিরোধে টিকা জরুরি
অনেক সময় শিশুদের পেটের সংক্রমণ মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। ডায়রিয়ার সঙ্গে হাম থাকলে অথবা শ্বাসনালীর সংক্রমণ থাকলে এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে বাচ্চার অসুখ মারাত্মক রূপ ধারণ করে। এ ছাড়া রোটা ভাইরাস নামক এক ভাইরাস ডায়রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুরা এ ভাইরাস ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু না করলে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে, বললেন শিশু চিকিৎসক শান্তনু রায়।

আরো পড়তে পারেন:  করোনাকালে সন্তানের সুস্থতায় করণীয়

রোটা ভাইরাস বা সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যেকোনো সময়ই হতে পারে। আর এ দুধরনের সংক্রমণ বাচ্চাদের বেশি অসুস্থ করে তোলে। রোটা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা হলে মারাত্মক ডায়রিয়ায় শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যাবে বলে আশা করা যায়। হাম আর ডায়রিয়া একসঙ্গে হলে বাচ্চার অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে। তাই হামের টিকাও দেয়া উচিত বললেন শান্তনু রায়।

ওআরএস দিতে ভুলবেন না

ডায়রিয়া হলে অনবরত মলত্যাগের কারণে বাচ্চাদের দ্রুত ডি-হাইড্রেশন হয়ে যায়। শরীরে পানির অভাব হলেই বাচ্চা ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে। তাই ডায়রিয়া শুরু হলেই বার বার ওআরএস খাওয়ানো বাধ্যতামূলক। এ ব্যাপারটা অনেকেরই জানা, তবু পানি বা ওআরএস খাওয়ানোর ব্যাপারে অনেক মা-বাবাই গড়িমসি করেন আর তাতেই বাচ্চার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। তবে ওআরএস খেলেও অনেক সময় বাচ্চা বার বার বমি করে। এ ক্ষেত্রে পানি খাওয়ানোই তো মুশকিল হয়ে যায়। এ রকম হলে বমির ওষুধ দিয়ে বমি বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি কোনো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা দরকার বললেন শান্তনু রায়।

মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনও দুধ নয়

ডায়রিয়া হলে বাচ্চা খেতে চায় না বলে অনেক মা খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু না খাওয়ালে শিশু আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোট শিশু অবশ্যই মায়ের দুধ খাবে। এছাড়া ভাত, ডাল, ঝোল, মাছ, কলা সব স্বাভাবিক খাবার দিতে পারেন। এ সময় বাইরের দুধ, গমজাত খাবার যেমন রুটি দেবেন না বলে পরামর্শ দিলেন পল্লব চট্টোপাধ্যায়। দুধের পরিবর্তে বাড়িতে পাতা দই দিয়ে পাতলা ঘোল বা ছানাও দেয়া যেতে পারে। বমি হলে শক্ত খাবার দেয়া উচিত। অল্প অল্প করে বার বার ওআরএস এবং লেবুর সরবত,  ছানার পানি, পাতলা ডাল বা স্যুপ দেয়া যেতে পারে। তবে করোনার সময় বাচ্চা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

আরো পড়তে পারেন:  ২০ ফেব্রুয়ারি: টিভিতে আজকের খেলা সূচি

 

সূত্র: সময় নিউজ

এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফেইসবুক পেজটি লাইক দিন এবং এই রকম আরো খবরের এলার্ট পেতে থাকুন

 আরো পড়তে পারেন:  

Loading...
আরো পড়তে পারেন:  ১৫ মার্চ: ইতিহাসে আজকের এই দিনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *