আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি ১০০ ডিম গতকালের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে এখনো খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি।
পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ১০০টি ফার্মের ডিম ১ হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গতকাল যা ছিল ১ হাজার ১৪৫ থেকে ১ হাজার ১৫৫ টাকা।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ডিমের দাম বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু সে দামে ডিম কিনতে পারছে না মানুষ। সোমবার দাম নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এতে পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করলেও প্রভাব পড়েনি খুচরায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা ডিম বাজারে এলে দাম আরও কমতে পারে। অন্যদিকে কেউ কেউ এটাও বলছেন, আমদানি করা ডিম চাহিদার তুলনায় অতি সামান্য। এ ডিম বাজারে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।
বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য শুরুতে চার কোটি ডিম আদমানি করতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে তথ্য এটাও বলছে, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। অর্থাৎ আমদানি করার ডিম দিয়ে দেশের একদিনের চাহিদা পূরণ হবে।
যদিও বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, প্রয়োজন হলে আরও ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। ডিমের বাজারে সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ডিম দেশে আনতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে। এসব ডিম সরকার নির্ধারিত দাম প্রতিটি ১২ টাকার মধ্যে বিক্রি হবে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে রামপুরার হাজীপাড়া ও মালিবাগ এলাকার বাজার ও পাড়ামহল্লার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। প্রতি হালি ৫০ টাকা। পাড়ামহল্লার দোকানে কোথাও কোথাও ৫২ টাকা দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম হচ্ছে প্রতি হালি ৪৮ টাকা।
সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতারা পাইকারি বাজার থেকে কম দামে কিনতে না পারাকে দায়ী করছেন। সবুজ ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, গতকাল আড়ত থেকে ১০০ ডিম কিনেছি ১ হাজার ১৬০ টাকা দরে। তার সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলে ১০০ ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ টাকায়। তার মানে একেকটা ডিমের দাম ১২ টাকা ১০ পয়সা। তাহলে কীভাবে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করবো। বেশি দামে কিনে আমরা লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে পারি না।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরকারের দাম নির্ধারণ কিংবা আমদানির খবরের পরও পাইকারি বাজারে ডিমের দাম সামান্যও কমেনি। বরং অনেক বাজারে মোবাইল কোর্টের কারণে ডিম বিক্রি কমে দেওয়াই সরবরাহ কিছুটা টান রয়েছে। এমন পরিস্থিতি চললে ডিমের দাম কমবে না বরং বাড়বে।
সরকারি পরিসংখ্যানে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন কম ও চাহিদা বেশি বলেই দাম বেড়েছে। সামান্য ডিম আমদানিই কার্যকর বাজার কৌশল নয়। দাম নির্ধারণ করে দিয়েও লাভ হবে না। প্রান্তিক খামারিদের সহযোগিতা বাড়িয়ে ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।
এদিকে এর আগে ২০১২ সালের জুনে ডিমের হালি ৪০ টাকায় উঠেছিল। তখন সরকার কিছু ডিম আমদানি করে। তাতেই দাম কমে যায়।